অস্ত্র দিয়ে নিরীহ অটোচালককে ফাঁসানোর অভিযোগ: সিসিটিভি ফুটেজে এসআই বদিউলের সংশ্লিষ্টতা
কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুই লাখ টাকার বিনিময়ে এক সিএনজি চালককে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বদিউল আলমসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজে পুরো ঘটনার ভয়াবহ চিত্র স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর (সোমবার) সকালে ঈদগড়–বাইশারী সড়কের মাথা থেকে পাবলিক ছদ্মবেশে এক পুলিশ সদস্য সিএনজি ভাড়া নেন। কিছু দূর যাওয়ার পর পানির বোতলের অজুহাতে সিএনজি থামিয়ে চালক জাফর আলমকে দোকানে পানি আনতে পাঠানো হয়। এই সুযোগে ওই পুলিশ সদস্য সিএনজির পেছনের অংশে একটি অস্ত্র রেখে দ্রুত নেমে যান।
সিএনজি চালক দোকান থেকে পানি নিয়ে ফিরতেই আগে থেকে ওত পেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। এরপর সিএনজির ভেতর থেকে সেই অস্ত্র বের করে জোরপূর্বক জাফর আলমের হাতে তুলে দিয়ে ছবি তোলা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গালাগাল ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাকে অস্ত্রটি নিজের বলে স্বীকার করাতে চাপ দেওয়া হয়। পুরো ঘটনাটি ঘটে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আনু মিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে, যেখানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘটনার প্রতিটি মুহূর্ত ধরা পড়ে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঈদগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বদিউল আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ওসির গানম্যান কনস্টেবল তানভীর ও কনস্টেবল মনির। ফুটেজে তিনজনকেই ঘটনাস্থলে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী জাফর আলমের স্ত্রী রাবেয়া অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় দুই যুবক শাহীন প্রকাশ বাপ্পি ও রাসেল তার মেয়ে ও ভাগ্নিকে ইভটিজিং করে আসছিল। বাধ্য হয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন, যার জেরে একজন গ্রেপ্তারও হয়। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি। এরপরই পরিকল্পিতভাবে দুই লাখ টাকা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে তার স্বামীকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাবেয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী একজন সাধারণ সিএনজি চালক। সে একদিন কাজ না করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। সেই মানুষটাকে টাকা নিয়ে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ আছে, তাই আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
জাফর আলমের কন্যা, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী লীজা মনি জানায়, মামলা দায়েরের পর থেকে তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। রাতে ঘরে থাকতে পারছে না, টিনের ঘরে হামলা, চুরি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ করে সে।
লীজা বলেন, আমার বাবাকে যেভাবে ফাঁসানো হয়েছে, সবই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। আমরা চাই আমার বাবার মুক্তি এবং দোষীদের শাস্তি।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এসআই বদিউল আলম ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ঊর্ধ্বতন নির্দেশের কথা বলেন। তিনি অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা ও বানোয়াট” দাবি করলেও মামলার এজাহারের সঙ্গে ঘটনার অসঙ্গতির বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেননি। অপরদিকে ওসির গানম্যান কনস্টেবল তানভীর দাবি করেন, বিষয়টি ওসি ফরিদা ইয়াসমিনের নির্দেশেই হয়েছে বলে মন্তব্য করে ফোন কেটে দেন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য যদি এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের দাবি, জাফর আলম একজন সৎ ও নিরীহ মানুষ। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তারা জড়িত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত প্রত্যাহার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং জাফর আলমের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।