কক্সবাজারে নোনাজলে ডুবে ছুটির দিন, উৎসবের আমেজ
সমুদ্র যেন আজ একটু বেশিই প্রাণবন্ত। ভোরের আলো ছুঁয়েই তার ঢেউগুলো যেন নেচে উঠেছে হাজারো অতিথির আগমনে।
আজ ০৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার ছুটির সকালটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পরিণত হয় এক বিশাল উৎসবে- যেখানে ঢেউ, মানুষ আর আনন্দ মিলে তৈরি হয় সমুদ্রের নিজস্ব এক গান।
সৈকতের বালুচরজুড়ে জীবনের রং বদলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। কেউ খালি পায়ে দৌড়ে ছুটছে জলে, কেউ সেলফির ফ্রেমে আটকে রাখতে চাইছে ঢেউয়ের হাসি। দূর থেকে শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন কিন্তু কাছে এলে তা মিশে যায় মানুষের হাসিমুখের কোলাহলে। মনে হয়, সাগরও যেন তার অতিথিদের স্বাগত জানাতে আজ আরও উদার।
রাজধানীর বাংলামোটর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সানজিদা বলেন, সমুদ্রে না এলে বছরটাই যেন অসম্পূর্ণ লাগে। এই নোনাজলেই যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
মতিঝিলথেকে আসা রিমন বলেন, সমুদ্রের ঢেউ ডাকলে শহরের ব্যস্ততা ভুলে এখানেই চলে আসি। বালিয়াড়ি, পানি-সব মিলিয়ে মনটাই অন্যরকম হয়ে যায়।
তাদের মতো আরও অসংখ্য মানুষ, যাদের গল্পগুলো আলাদা, কিন্তু অনুভূতিটা একই। কক্সবাজারে এলে মন ভাল হয়ে যায়।
ডিসেম্বরের শুরুতেই যে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে, তার স্পষ্ট ছাপ মিলছে হোটেল-মোটেলের বুকিংয়ে। রুম না পাওয়ার চিন্তায় অনেকে আগেভাগেই বুকিং নিশ্চিত করেছেন। ব্যবসায়ীদের তাই চোখে-মুখে স্বস্তির ঝিলিক।
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের মহাব্যবস্থাপক ইয়াকুব আলী জানালেন, মৌসুমের শুরুটা ভালো। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এমন ভিড় থাকলে পুরো মৌসুমটা জমে উঠবে।
সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে যেন কেউ বিপদের মুখে না পড়ে, এ দায়িত্ব নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত লাইফগার্ডরা। ঢেউয়ের হাতছানিতে বালুচর থেকে একটু এগোতেই তারা সতর্ক করে দেন পর্যটকদের।
সিনিয়র লাইফগার্ড আব্দু সালাম জানান, তিনটি পয়েন্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা টহলে আছি। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনও নিয়মিত নজরদারি করছে।
দিন শেষে সূর্য যখন লাল হয়ে ডুবে যায় সমুদ্রের বুকে, তখনও মানুষ ভরে থাকে সৈকতে। শিশুদের খেলা থামে না, দম্পতিদের হাঁটা ধীর হয় না। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমন ভিড় পুরো মৌসুমেই থাকলে কক্সবাজার আরও সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হবে।
সাগরের দিকে তাকালে মনে হয়, এ শহর শুধু ঢেউ কিংবা বালুর নয়, মানুষের গল্পে গল্পে ভরা একটি চলমান জীবন।