মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিন

পর্যটকের পদচারণায় সেন্টমার্টিনে ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য

ছবি: কক্সবাজার সংবাদ

সরকারি কড়াকড়ির মধ্যেও জমে উঠছে দ্বীপের পর্যটন মৌসুম

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। যদিও আগের বছরের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কম, তবুও দ্বীপের হোটেল–রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, বাজার ও সমুদ্রসৈকত সবখানেই চোখে পড়ছে প্রাণচাঞ্চল্য। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার নামে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা, রাতযাপন বন্ধ, আর পর্যটন সীমিতকরণের মতো সিদ্ধান্তে দ্বীপের পর্যটনখাত যে স্থবির হয়ে পড়েছিল, চলতি মৌসুমের দুই মাসের রাতযাপনের অনুমতি সেই স্থবিরতায় নতুন গতি এনেছে।

পরিবেশ রক্ষার ১২ দফা বিধিনিষেধ মেনে পর্যটকরা এখন কক্সবাজারের নুনিয়া ছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে জাহাজে দীর্ঘ সমুদ্রপথ অতিক্রম করে সেন্টমার্টিনে পৌঁছাচ্ছেন। আগের তুলনায় আগ্রহ কম হলেও দিনদিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। ডিসেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনে কয়েকটি পর্যটকবাহী জাহাজে প্রতিদিনই এক হাজারের বেশি যাত্রী দ্বীপে ভ্রমণ করেছেন। কখনো তিনটি, কখনো পাঁচটি জাহাজে করে ১,১৭৪ থেকে ১,৭৪১ জন পর্যন্ত পর্যটক দ্বীপে গেছেন- যা স্থানীয়দের মনে আবারও আশার সঞ্চার করেছে। যদিও প্রশাসনের অনুমতি অনুযায়ী প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে, বাস্তবে দ্বীপে অবস্থান করছেন প্রতিদিন গড়ে বারো থেকে তেরো শত জন। পর্যটন ফিরে এলেও স্থানীয়দের অনুভূতি মিশ্র।

সী-প্রবাল রেস্টুরেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত নুর মোহাম্মদ জানান, রাতযাপনের অনুমতি না থাকলে এমন উপস্থিতি কোনোভাবেই দেখা যেত না। পর্যটক কম হলেও ব্যবসায় আবারো গতি ফিরেছে, এটাই তাদের জন্য বড় স্বস্তি।

তবে ইউরো বাংলা রেস্টুরেন্টের পরিচালক জিয়াউল হক জানান ভিন্ন কথা। তাঁর অভিযোগ, বাইরে থেকে আসা বড় উদ্যোক্তারা আগেই জাহাজ ও আবাসিক কটেজগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে রাখায় লাভের বড় অংশ তারাই পেয়ে যান; স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভাগ্যে জোটে সামান্যটাই। ফলে দ্বীপে পর্যটন জমে উঠলেও অর্থনৈতিক সুবিধা সমানভাবে বণ্টিত হচ্ছে না।

দ্বীপের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে ভ্যানচালক, দোকানদার ও গাইডদের মুখে ফিরে এসেছে হাসি।

ভ্যানচালক ইলিয়াস মিয়া জানান, পর্যটক এলেই তাদের জীবিকা সচল হয়। এই দুই মাসের উপার্জন দিয়েই পরিবারের সারা বছরের বড় অংশের খরচ মেটাতে পারেন তারা। তার কথায় স্পষ্ট, পর্যটনই দ্বীপের সাধারণ মানুষের প্রধান আশ্রয়।

এদিকে পর্যটকদের অভিজ্ঞতাও ইতিবাচক। রাজশাহী জুনায়েদ হাসান প্রথমবার দ্বীপে এসে মুগ্ধ হয়েছেন সাগরের নীল ঢেউ, সীচ বিচের নীরবতা ও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। তাঁর সঙ্গীরাও একইভাবে দ্বীপের পরিবেশে উচ্ছ্বসিত।

লিয়াকত আলী নামে আরেক পর্যটক জানান, এ বছর দ্বীপে প্লাস্টিক ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা পরিবেশ রক্ষায় একটি ভালো দৃষ্টান্ত।

দ্বীপে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

টেকনাফের ইউএনও মো. ইনামুল হাফিজ নাদিম জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে এবং সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন এখন এক ধরনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সীমিত পর্যটন নীতি, কঠোর পরিবেশ সুরক্ষা, অন্যদিকে স্থানীয়দের জীবিকা ও পর্যটকদের প্রত্যাশা সবকিছুর ভারসাম্য রক্ষা করা প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও পর্যটকের ফিরে আসা দ্বীপে আবারো জীবন ফিরিয়ে এনেছে। পরিচ্ছন্ন সৈকত, কমছে প্লাস্টিক ব্যবহার, বাড়ছে সচেতনতা এসবই ইঙ্গিত করছে সেন্টমার্টিন টেকসই পর্যটনের নতুন পথচলায় এগোচ্ছে। ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নির্ভর করবে এই ভারসাম্য কতটা বজায় রাখা যায় তার ওপর।

 

ক্যাটাগরি