সোনাদিয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কঠোর নির্দেশ: উপজেলা প্রশাসনের
মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে সরকারি জমি দখল করে গড়ে ওঠা রিসোর্ট, কটেজ ও বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা দ্রুত সরিয়ে নিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী মাইকিং করে জনগণকে এ নির্দেশনার বিষয়ে জানানো হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সোনাদিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান মাহমুদ ডালিম জানান, দ্বীপে সরকারি জমি দখল, কটেজ নির্মাণ এবং প্যারাবন নিধনসহ নানা ধরনের পরিবেশবিনাশী কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্যারাবন কাটার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোনাদিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ায় গত কয়েক বছরে ঝাউবন কেটে একাধিক রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ এখনও চলছে। প্রায় নয় হাজার একর উপকূলীয় বন ও প্যারাবনে সমৃদ্ধ এই দ্বীপে দখলদারিত্ব, চিংড়িঘের সম্প্রসারণ এবং বনের জমিকে লবণমাঠে রূপান্তর করার প্রবণতা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। রিসোর্টগুলো থেকে পর্যটকদের জন্য তাঁবু ভাড়া দেওয়া হয় এবং রাতে লাল-নীল আলো জ্বালিয়ে রাখতে জেনারেটর ও সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়, যা সোনাদিয়ার শান্ত রাতের পরিবেশকে নষ্ট করছে।
পরিবেশবিদদের মতে, সাগর তীরবর্তী সোনাদিয়া একটি পরিবেশগতভাবে অতি সংবেদনশীল এলাকা। এখানকার প্যারাবন সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু রিসোর্ট থেকে উৎপন্ন শব্দদূষণ, বৈদ্যুতিক আলো এবং মানুষের অবাধ চলাচল কচ্ছপের ডিম পাড়ার প্রক্রিয়াকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। ইতোমধ্যে ডিম পাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। শুধু কচ্ছপই নয়, শীত মৌসুমে দ্বীপে আগত হাজারো অতিথি পাখির জন্যও এসব আলো ও শব্দ মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। গবেষকদের তথ্যমতে, প্রায় ১৭০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সোনাদিয়াকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে এবং দ্বীপটিতে প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ ও ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। অবৈধ পর্যটন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে এই জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি লিজ নেয়। এরপর ব্যাপক হারে প্যারাবন কাটা, চিংড়িঘের স্থাপন এবং পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ নিয়ে একাধিক মামলা করে। দীর্ঘ সমালোচনার পর চলতি বছরের ৫ মে ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার বরাদ্দ বাতিল করে জমিটি পুনরায় বন বিভাগের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
প্রশাসনের সাম্প্রতিক কঠোর নির্দেশনার পর স্থানীয়দের মধ্যে আশা তৈরি হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে দখল ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে হুমকির মুখে থাকা এ দ্বীপ ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরবে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, নিয়মিত নজরদারি, সমন্বিত অভিযান এবং দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।